শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

অভিমান-৩


তোমার সাথে ছাড়াছাড়ি 
তোমার সাথে আড়ি,
তোমার সাথে নেই কথা কোন
যাব না তোমার বাড়ি। 

আমার সাথে লুকোচুরি?
তোমার মাথায় বাড়ি,
তোমার মাথায় কাঁচা গোবর
আমার গালে দাড়ি।

বোকা-সোঁকা আমি

পেয়েছো তো এক হাঁদারামকে
সব কাজে করো ক্যাঁচক্যাঁচ।
বুঝি না কি করে একটা মানুষের 
মাথায় থাকে এত প্যাঁচ! 

ভেবেছো কি তুমি খেয়ালের বসে 
ভুলে যাবো আমি সব? 
মাথা পেতে নেবো সবটুকু তার
যতই করো কলরব? 

মানলাম আমি বোকা-সোঁকা অতি
চুপিসারে তার সব মনে রাখি।
একবার শুধু বলো ভালবাসি-
দেখবে, কি করে সব বকা-ঝকা গিলে বসে আছি।

কথোপকথন-১

আমার সাথে রুপালী চাদঁ দেখবে? 
একটি সুর্যোদয় নতুবা একটি গোধূলি বেলা? 

# নাহ বাবা, হাতে মোটেও সময় নেই। 
আমার কাছে এগুলো সময়ের অপচয় মাত্র। 

শিশির ভেজা ঘাসে কিংবা কনকনে শীতের রাতে 
হাতে হাত রেখে যোজন-যোজন পাড়ি দেবে? 

# নাহ বাবা, এতো ইচ্ছে আমার নেই। 
ঠান্ডায় আমার এলার্জি।

কোন উদাসী বিকেলে একমগ উষ্ণ কফি কিংবা
কোন ঝমঝম বৃস্টির দুপুরে এক পেয়ালা চা
খাবে আমার সাথে?

# নাহ বাবা, ওগুলো খেতে পারি না,
খেলে ঘুম হয় না।

তাহলে চলো এক কাজ করি,
চুপচাপ বসে থাকি।

# চলো থাকি।

অভিমান-২

তুমি যদি আমায় ডাকো, 
আমি তোমায় ডাকবো না।
আগুন যদি জ্বালিয়ে দাও,
আমি সে আগুনে পুড়বো না।

দেখাও যদি হাজারো ভয়,
তবুও ভয় আমি পাবো না।
ভালবাসি বলে আকুতি করলেও
আমি ভালবাসি বলবো না।

মনে রেখো, গাল ধরে টেনে দিলেও
আমি কিন্তু গলবো না।
বলে রাখছি, আমি কিন্তু তোমায় আর
ভালবাসি বলবো না।

তোমার জন্য

তোমার জন্য ধুলোবালি শহর থেকে বহু দূরে-
একটা বাসা বানাবো।

তোমার জন্য চাঁদের বুড়ির কাছ থেকে সূতো ধার নিয়ে-
একটা শাড়ি বানাবো।

তোমার জন্য মেঘেদের সাথে চুক্তি করে-
বৃষ্টি নামাবো।

তোমার জন্য আকাশের কাছ থেকে হাজার খানেক তারা ধার করে- 
বাসার ছাঁদে টাঙিয়ে রাখবো।

কবিতা

একটা কবিতা তোমার জন্য 
একটা কবিতা আমার,
একটা কবিতা ছেড়া স্যান্ডেল নিয়ে
আরেকটা নিয়ে জামার। 

একটা গল্প তোমার জন্য
একটা গল্প আমার,
একটা গল্প মাছ খেকো পেত্নীর 
আরেকটা মহামানব-নামার। 

একটা উপন্যাস তোমার জন্য
একটা উপন্যাস আমার,
একটা উপন্যাস গান্ধি পোকার
আরেকটা মাছরাঙ্গার।

অভিমান

যতই থাকো গাল ফুলিয়ে
আমি তোমার রাগ ভাঙ্গাবো না,
যতই থাকো দূরে দূরে 
আমি তোমার কাছে আসবো না। 

যতই করো অভিমান 
আমি এর ধার ধারি না,
যতই গাও অশ্রুগান
আমি সে গান শুনবো না। 

ভেবো না আমি
গাল ফুলিয়ে নাক ভিজিয়ে
লিখছি আবোলতাবোল কবিতা,
ভেবো না তুমি
প্রতিবারের মতো ভালবাসি বললেই
ভুলে যাবো আমি সবি তা।

অস্তিত্ব

আয়নাতে নিজেকে দেখে যদি কোন দিন যাও চমকে,
নিজের অস্তিত্বে যদি হও সন্দিহান, যদি যাও থমকে,
নিজের গা থেকে যদি আঁশটে গন্ধ পাও,
নিজের কাছ থেকে নিজেই যদি পালিয়ে বেড়াও,
তবে মনে রেখো তোমাতে কিছু অংশ আছে আমারও। 
হাত দিয়ে পরশ করবে যেথা,
আমার অস্তিত্ব মিলবে সেথা।
পালিয়ে যাবার কোন পথ নেই,
বেলা শেষে মিলতে হবে এই আমাতেই।

অগোচর

রাত ৯টা বেজে ৩০ মিনিট। মোবাইলটা বেশ কিছুক্ষণ যাবত ভাইব্রেট করেই যাচ্ছে, জিসানের ফোন। উপায় না দেখে শেষে ফোন রিসিভ করতে হয় মোনাকে।
"প্লীজ জিসান আজ না, কাল থেকে আমার টার্ম ফাইনাল শুরু হচ্ছে। প্লীজ।"
"দেখ মোনা, এইসব পরীক্ষা তো আসবে যাবে, তাই বলে এতো বড় একটা সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না। ফরেন কান্ট্রি থেকে আসছে। তাছাড়া আমি কথা দিয়ে ফেলেছি, মানা করি কিভাবে?" 
মোনা আর কিছু না বলেই ফোন রেখে দেয়।

নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের মেধাবী মেয়ে মোনা। বাবা-মায়ের শখ রাখতেই উচ্চ শিক্ষার জন্য তাকে মফস্বল ছেড়ে পাড়ি জমাতে হয় যান্ত্রিকতায় মোড়া এই শহরে। প্রতি মাসে টিউশনি থেকে পাওয়া কিছু অর্থ আর বাবার দেওয়া অল্প কিছু টাকায় চলে যাচ্ছিলো দিনগুলো। সংসারে দু'টি মেয়ের পড়াশুনা আর যাবতীয় খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হতো তার বাবা রহমত আলীকে। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে দেনা-কর্য করে পাহাড় সমান দেনায় চাপা পড়ে যায় রহমত আলী বিগত আড়াই-তিন বছরে। তারপরও কোন আক্ষেপ নেই তার, মেয়ের একাউন্টিং পড়া শেষ হলেই সব দেনা কর্যের ভার থেকে মুক্তি পাবে রহমত আলী। মেয়ে চাকরী করে সব দেনা পরিশোধ করে দিবে। এই তো আর মাত্র দেড়টা বছর বাকী। অপেক্ষার দিন গুনতে থাকে রহমত আলী।

রাত ১০টা। আবারো মোবাইলটা ভাইব্রেট করছে। জিসানের ফোন।
"মোনা রেডি হয়েছিস? আমি কি নিয়ে আসবো বেটাকে?"
"নাহ, আমি এখনো পড়তেছি।"
"হারাম*দি, পড়া লেখা কইরা যে কি বা*টা করে ফেলবা তা জানা আছে । ভাল কইরা কইছিলাম দেখে কানে ঢুকে নাই? তাই না? আমি ১০ মিনিটের মধ্যে আইতাছি। যদি আইজ কোন কিছু উল্টাপাল্টা হয়, তাহলে তোরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাইর কইরা দিমু। *লী।"
ফোন রেখে দেয় জিসান। জিসান নামের লোকটিকে অনেক ভয় পায় মোনা। তার হাতেই এখন মোনার পুরো পৃথিবীর বেঁচে থাকা নির্ভর করে।

হঠাৎ-ই একরাতে বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা উঠে রহমত আলীর। দিক্বিদিক না দেখে বুকে হাত দিয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। সাথে সাথে মোনার মা, হালিমা বেগম দৌড়ে এসে স্বামীকে আগলে ধরে। স্বামীকে নিয়ে মেয়ে মুন্নিকে সঙ্গে করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় হালিমা বেগম। পরদিন সকালে রহমত আলীর রিপোর্ট হাতে আসে। ব্রেন স্ট্রোকের ফলে দুই পা প্যারালাইসড হয়ে যায় রহমত আলীর। হাত আর মুখও খানিকটা বাঁকা হয়ে যায়। সদা হাস্যজ্বল রহমত আলীর হাসি হঠাৎ-ই বিলীন হয়ে যায়।

গত দু'মাস থেকে টিউশনি না থাকায় পুরো খরচটায় বাবার কাছ থেকে নিতে হয়েছিল মোনার। মোনা জানে তার কারনের বাবা ব্রেট স্ট্রোক করেছে। সেদিনের পর থেকে সে আর বাসায় যায় নি। শুধু মাস শেষে বাবার ওষুধের টাকা আর যাবতীয় খরচের টাকা বাবদ ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয় বাড়িতে। ছোট বোন মুন্নি এস.এস.সি তে সব বিষয়ে এ+ পেয়েছে। অনেক বড় মানুষ হবে তার সে দিনকার ছোট্ট বোনটি। বোনকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন মোনার। মুন্নি রোজ রোজ ফোন দিয়ে বাড়িতে যেতে বলে মোনাকে। কিন্তু পরীক্ষা আর টিউশনির অজুহাত দিয়ে পাড় পেয়ে যায় মোনা। প্যারালাইসড বাবা, দুঃখিনী মা, আর আদরের বোন মুন্নিই এখন মোনার পৃথিবী।

রাত ১০ টা বেজে ৫ মিনিট। বই গুঁটিয়ে মোনা বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায় গোসলের উদ্দেশ্যে। আজ ফরেনার আসবে তার কাছে, একটু স্পেশাল ভাবেই তৈরি হতে হবে তাকে। বাথরুমে ঢুকে গায়ের জামা খুলে আয়নার সামনে দাড়ায় সে। গা থেকে জামা সরা মাত্রই ধবধবে সাদা শরীরে অসংখ্য কালো কালো দাগ প্রতীয়মান হয়। কোন কোনটা সিগেরেটের আগুনে ঝলসে যাওয়া বিদঘুটে দাগ আবার কোনটা জমাট বাঁধা রক্তের।

তানু

কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সাক্ষরের। রুমমেট দু'জনই এক্সাম শেষে বাড়িতে চলে যাওয়ায় একাই থাকতে হচ্ছে অগুছালো এই ব্যাচেলরদের ঘরটাতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চেহারায় প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে যায় সাক্ষর। ঘুমের ঘোড়ে ছোট ছোট হয়ে থাকা চোখ হঠাৎ করেই বড় হয়ে যায় তানিয়া কে দেখে। সাক্ষরের ব্যাচেলর জীবনের ইতি টেনে দিয়ে এক সন্ধ্যায় এক মুঠ গোলাপ হাতে নিয়ে এই মেয়েটি হাজির হয় সাক্ষরের সামনে, সাক্ষর তখন না করতে পারে নি গোলগাল শ্যামলা চেহারার ছিপছাপ গড়নের মেয়েটাকে। সেই মেয়েটাই এখন সাক্ষরের সব। কোন কথা না বলেই সাক্ষরকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে বিছানার চারপাশ হাতড়াতে থাকে তানিয়া। সাক্ষর কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।

"তানু, হচ্ছেটা কি?"
"একদম চুপ, একটা কথাও বলবা না।"

তানিয়ার চোখ থেকে বের হওয়া আগ্নেয়গিরির আগুন বেচারা সাক্ষরের অনেক পরিচিত। সে বুঝতে পারছে আজ কিছু একটা হবে। সে ভয়ে ভয়ে আবার জিগ্যেস করে-
"তানু কি হয়েছে? কিছু তো বলো, আমি কি কিছু করেছি?"
"নাহ।"
"তাহলে এমন করছো কেন?"
"আমার মনে অনেক রঙ তো, তাই।"

সাক্ষর চুপচাপ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কিচ্ছুক্ষণ পর তানিয়া বালিশের নিচ থেকে সাক্ষরের ফোনটা বের করে, গর্জন দিয়ে বলে-
"এই নে, দেখ।"
"কি দেখবো?"
"আমার মাথা দেখ।"

সাক্ষর ভয়ে ভয়ে তানিয়ার কাছ থেকে মোবাইলটা নেয়। মোবাইলের স্ক্রিনের উপর চোখ পড়তেই দেখে ৪২ টা মিসড কল উঠে আছে। ঘড়ির দিতে তাকায় সাক্ষর, বেলা ১২ টা। আজ ১৫ই আগস্ট। সাক্ষর আর তানিয়ার ভালবাসার অধ্যায়ের আরেকটি বছরের সূচনা হবে আজ থেকে। ভালবাসার ৭৩০ তম দিনটি তানিয়ার সাথে কাটানোর কথা ছিল সাক্ষরের।

"চুপ করে আছিস কেন? কিছু তো বল।"
"আই এম স্যরি তানু।"
"আচ্ছা।"
"স্যরি তো, আমি তো মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমাই নি। বালিশের নিচে থাকায় শুনতে পাইনি। এই কানে ধরলাম। প্লীজ মাফ করে দাও এই শেষ বারের মতো।"
"তোমার এটা কত তম শেষ বার?"
"স্যরি তো। এইটা সত্যি শেষ বার। আর কখনো এইরকম হবে না। আমার তানুকে ধরে বললাম।"
"রোজ রোজ কোন না কোন ঝামেলা তুমি পাকাওই, আজকের দিনটায়ও ঝামেলা পাকাতে হলো?"
"স্যরি।"
"এতো টেনশন কেন দাও আমারে? আমি যদি মরে যেতাম?"
"চুপ। আর কক্ষনো দিবো না। সত্যি।"
"সত্যি তো?"
"হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।"

সাক্ষর ড্রয়ার থেকে একটা আংটি বের করে তানিয়ার অনামিকায় পরিয়ে দেয়। তানিয়া আকস্মিকতায় কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। 

আমি আছি আমি নাই

আমি আছি আমি নাই 
তোমার মাঝে হারিয়ে যাই,
উঁকি মেরে তাকিয়ে দেখে 
পরমুহূর্তেই আড়ালে যাই। 

আমি আছি আমি নাই
তোমার পেছন পেছন যাই,
তোমার চোখে বিজলি দেখে 
গা বাঁচিয়ে পালিয়ে বেড়াই। 

আমি আছি আমি নাই
তোমার কাছাকাছি যাই-
নিজেকে তখন খুঁজে পাই,
চোখের আড়াল হতেই আবার
আমি নাই, আমি নাই।

স্বপ্ন ছিল


স্বপ্ন ছিল বৃষ্টি হয়ে
আকাশ থেকে ঝরে পড়বার।
স্বপ্ন ছিল পাখির হয়ে
সাতসমুদ্র পাড়ি দেবার।

স্বপ্ন ছিল মেঘ হয়ে
আকাশ মাঝে উড়ে বেড়াবার।
স্বপ্ন ছিল জোনাক হয়ে
সন্ধ্যে বেলার আলো হবার।

স্বপ্ন ছিল খেয়া ঘাটে
নিজের একটা খেয়া চড়াবার।
স্বপ্ন ছিল বাস্তববাদী হয়ে
বাস্তবতার গান গাবার।

স্বপ্ন ছিল সুখ পাখি হয়ে
সবার সুখ কেড়ে নেবার।
স্বপ্ন ছিল সাত রঙা রঙে রাঙিয়ে দিবো
চাঁদের কণা মুখখানি তাহার।

স্বপ্ন ছিল রংধনু রং
আকাশ থেকে চুরি করবার।
স্বপ্ন ছিল স্বপ্ন,আমার
দূর পর্বতে হারিয়ে যাবার।

২৪ খানা পাপড়ি

ভুল দামে কেনা গোলাপে আমার 
২৪ খানা পাপড়ি, 
দুইয়ের সাথে দুই মিলিয়ে চার হয়েছে-
পাঁচ হলেই বা কার কি? 
আমার শুধু ইচ্ছে জানার 
ভুল দামে কেনা গোলাপে আমার
আজও কি রয়েছে ২৪ খানা পাপড়ি? 
নাকি দুই থেকে দুই বাদ গিয়ে শুন্য হয়েছে!
শুন্য হলেই বা কার কি? 
আমার ২৪ খানা পাপড়ি।

আকাঙ্ক্ষা

তোমার কাছে একটুকরো আলো চেয়েছিলাম, 
বিনিময়ে দিবো বলেছিলাম-
আমার আধারে ঢাকা মেঘলা আকাশ থেকে এক ফালি মেঘ,
যা বৃষ্টি হয়ে ঝরবে তোমার বাহুডোরে, 
তুমি বলেছিলে বৃষ্টি তোমায় তেমন টানে না। 

তোমার কাছে এক টুকরো পড়ন্ত বিকেল চেয়েছিলাম,
বিনিময়ে দিবো বলেছিলাম-
মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে- ঘুম পাড়ানির গান,
যা তোমায় মূহুর্তেই ঘুম পাড়িয় দিবে,
তুমি বলেছিলে মাঝরাতে তোমার ঘুম ভাঙ্গে না।