বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১১

শঙ্খনীল ভালবাসা

বৃষ্টি ভেজা এক সকালে তমাল ব্যাথিতো মনে দরজার পাশে বসে আছে।আজ মৌমিতার আসার কথা।কিন্তু বৃষ্টির হাব-ভাব দেখে মনে হয়না যে খুব শীঘ্রই থামবে।তাই হয়তো মৌমিতারও আসা হবে না।মন খারাপ করে চুপটি মেরে বসে রইল তমাল।দূরে নারিকেল গাছের পাতা বেয়ে বৃষ্টির পানি পরার দৃশ্য দেখতে লাগলো।মনের মধ্যে কিছু অযাচিত প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যাচ্ছে....

মৌমিতা!!!বৃষ্টি ভেজা স্নিগ্ধ এক বর্ষার সন্ধ্যায়,গোলাপি সিল্কের শাড়ি পড়ে,রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় মৌমিতাকে প্রথম দেখতে পায় তমাল।পুরো শরীর বৃষ্টির পানিতে ভেজা।কপালে গোলাপি রঙের বড় একটি টীপ।বড় বড় দুইটি চোখ।বা-চোখের কোণে একটি জলবিন্দু চিকচিক করছে।কি অপূর্বই না লাগছে দেখতে।তমাল যেন ঐ জলবিন্দুর প্রেমে পড়ে গেলো!!!

তমাল মৌমিতার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।"বৃষ্টির পানি গায়ে লেগে থাকলে যে ঠাণ্ডা লেগে যাবে"এই বলে গাড়ি থেকে তোয়ালে এনে মৌমিতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,চলুন আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।

তমাল,মৌমিতা আর তার ছোট ভাইকে নিয়ে গাড়িতে।তমাল ড্রাইভিং করছে আর ওরা দুইজন পেছনের সিটে বসা।ওয়াচিং গ্লাস দিয়ে তমাল মৌমিতাকে দেখছে।বিধাতা তাঁর নিপুণ হাতে নিখুঁত করে বানিয়েছেন মৌমিতাকে।অবাক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে মৌমিতা ! কি যেন দেখে হঠাৎ হেসে ফেললো।অসম্ভব রকম সুন্দর তার হাসি!!!তমাল অপলক দৃষ্টিতে তা দেখতে লাগলো।আর ভাবনার জগতে হারিয়ে গেলো।তার ভাবনায় ভারতচন্দ্রের সেই কবিতাটা চলে আসলো-

"কে বলে শারদশশী,সে মুখের তুলা
পদ নখে পড়ে আছে,তার কতগুলা।"

ভাবনার রেশ কেটে গেলো মৌমিতার কন্ঠ আকস্মিক কানে আসাতে-EXCUSE ME,আমাদের বাসা এসে পড়েছে,KINDLY নামিয়ে দিন।গাড়ি থেকে নেমে তমালকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো মৌমিতা,রেখে গেলো কিছু অনুভূতি।তমালের বুকের বাঁ-পাশটা একটু ব্যাথা করতে লাগলো।


মৌমিতার সাথে পরিচয় আজ প্রায় দুই বছর।ঐ দিনের মতো আজও প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টি হচ্ছে তমালের মনোকুঠিরের দেয়াল বেয়ে।আর উপচিয়ে পড়ছে কিছু নাম না জানা রং।মৌমিতাকে ভালোলাগার ব্যাপারটা অনেক আগেই ভালবাসাতে পরিণত হয়েছে।বারবার চেষ্টা করেও সে কথাগুলো মৌমিতাকে বলতে পারেনি।হয়তো কখনো পারবেও না!!!

তমালের হঠাৎ চোখ পড়লো দূর থেকে ভেসে আসা গোলাপি কিছু একটার দিকে।প্রবল বৃষ্টির কারনে বোঝা যাচ্ছে না।তবে তমালের কাছে আর অবোধ্য রইলো না যে,গোলাপি শাড়ি পড়ে মৌমিতা তাদের বাসায় আসছে।এতো বৃষ্টির মধ্যেও মৌমিতা তার সাথে দেখা করতে আসবে,তা তার জানা ছিল না।কাছে আসতেই সে দেখতে পেলো,গোলাপি রঙের শাড়ি আর বড় গোলাপি একটি টীপ পরিহিত অবস্থায় মৌমিতা।আজও তার বা-চোখের কোণে একটি জলবিন্দু চিকচিক করছে।আজও আবার এই জলবিন্দুর প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করছে তমালের !!!

তমালকে দরজার পাশে বসে থাকতে দেখে মৌমিতা হাসিমাখা কন্ঠে বলতে লাগলো,তোমার সাথে আমার পরিচয়ের আজ দুই বছর পূর্ণ হল।তাইতো সেইদিনের মতো করে সেজে এসেছিলাম।কিন্তু দেখলে আজও বৃষ্টিটা আমাকে ভিজিয়ে দিলো।তোয়ালে নিয়ে আসো তো,গা মুছে ঘরে ঢুকব।

তমাল নিথর হয়ে বসে রইল।তার চোখের কোণে জলবিন্দু চিকচিক করছে।কিন্তু এইটা যে বৃষ্টির জলবিন্দু নয়!!!!