মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১১

আকস্মিক স্তব্ধতা

"রনি ওই রনি,উঠছ না,ক্লাস শুরু হওয়ার সময় হয়ে গেছে,উঠ যলদি,কিরে উঠছ না কেন?আমি গেলাম ক্লাস করতে"- ১১ বছরের দেব তার বোর্ডিংস্কুলের রুমম্যাট রনিকে ডেকে নিরাশভাবে ক্লাসে চলে গেল।

রনি এখানে এসেছে প্রায় ছয় মাস।খুবই চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে রনি।আর এই চঞ্চলতার কারনেই তাকে বোর্ডিংস্কুলে পাঠানো হয়েছে।বাসায় থাকাকালীন সময়ে বড় ভাইটাকে জ্বালিয়ে মারতো।সারাদিন মাথায় শুধু দুষ্টামির চিন্তা।একদিন করল কি,বড় ভাইটার স্কুলের প্যান্ট কেটে নিজের জন্য হাফপ্যান্ট বানিয়ে ফেলছিল। স্কুলে যাবার সময় হলে ভাই তার কান্ডকারখানা টের পায়।ওই দিন রনিকে তার ভাইটার কাছ থেকে অনেক মার খেতে হয়েছিল।তবে সে জানে যে যতই মারুক আর বকুক না কেন,তার ভাইটা তাকে অনেক ভালোবাসে।তাইতো প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় তার সব চেয়ে প্রিয় কিটকেট চকলেট নিয়ে আসতো তার জন্য।তার ক্রিকেট খেলা,সাইকেল চালানোর হাতেখড়িও হয় বড় ভাইটার কাছ থেকেই।

এখানে আসার পর তার মধ্যে তুমুল পরিবর্তন দেখা গেল।হঠাৎ করেই যেন ছেলেটা কেমন মনমরা হয়ে পড়লো।চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেলো।কেমন যেন রোগা রোগা হয়ে গেলো।আর সব চেয়ে বড় পরিবর্তনটা হল,কখনো বড় ভাইটা তাকে দেখতে আসলে,তার সাথে আর দুষ্টামি করে না,বরং ভাইটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে,একটা কথাও মুখ ফুটে বলে না।মনে মনে বিড়বিড় করে বলতে থাকে "ভাই,তোকে আমি অনেক ভালোবাসি রে" তার ভাইটাও কি একই কথা বলতো কিনা কে জানে!!!

আজ বৃহস্প্রতিবার।গ্রীষ্মের ছুটির আগে আজই শেষ ক্লাস।বোর্ডিংস্কুলের সকল ছাত্রের মধ্যে কত উত্তেজনা কাজ করতেছে,ক্লাস শেষে বাড়ি যাবে।কিন্ত এ কি!!! রনি তো দেখি এখনো ঘুমিয়ে আছে।ক্লাস শেষে দেব রোমে এসে বলতেছে"এই রনি উঠ না,আঙ্কেল-আন্টি এখনই চলে আসবে।উঠ বলতেছি।" কিন্ত রনির কোনো সারা-শব্দ নেই।

 দেবের কাছে রনিকে আগে অনেক রহস্যময় লাগত।রনি প্রায়ই রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো আর কি যেন বিড়বিড় করে বলতো।দেব বোঝতো না,ঠাট্টা করে বলতো "কিরে রনি,তুই কি পাগল হয়ে গেছিস নাকি??"রনির কাছ থেকে কোনো উত্তর আসতো না।সে সব সময় কেমন যেন অন্যমনস্ক থাকতো।একদিন গভীর রাতে দেবের ঘুম ভেঙ্গে গেলে,অন্ধকার ঘরের মধ্যেই সে দেখতে পেল,রনি যেন কার ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদতেছে,দেবের কাছে আর অবোধ্য রইল না যে,ছবিটা তার বড় ভাইয়ের।রনির চোখের নিচের কালোদাগ গুলোর কারনও তার কাছে আর অস্পষ্ট রইলো না।

"রনি,আমার জাদুমণি উঠ না,উঠ সোনা,উঠ,দেখ তোর মা এসেছে তোকে নিয়ে যেতে।উঠ বাবা,বাসায় যে তোর ভাইটা তোকে এক সারপ্রাইস দিবে বলে অপেক্ষা করতেছে,উঠ না লক্ষী ছেলে আমার,উঠ।"মার কান্না জরানো কথাগুলো যে তার আদরের ছেলের কানে যাচ্ছে না।প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে বাইরে থেকে আম্বুলেঞ্চ এর শব্দ আসতেছে।