বুধবার, ৬ জুলাই, ২০১১

চূর্ণ অস্থি

বুকের ভেতর চূর্ণ অস্থি
মাঝখানটায় ঘাঁ,
অনেক যতনে বেঁড়ে উঠছে সেখানে
রক্তের ফোঁয়ারা।

হৃদয় ভাঙ্গা সখার মত হঠাৎ 
সিউঁরে ওঠে গাঁ,
বুক ফাটা আর্তনাদে
অবলিলায় কেঁদে উঠা।

বুকের ভেতর চূর্ণ অস্থি
তার মাঝখানটায় ঘাঁ।

অজানা এক বাঁধন

অন্ধকার ঘরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তমাল।অঝোর বৃষ্টির ফোটা বাতাসের নাওয়ে ভেসে তমালের শরীরটা ভিজিয়ে দিচ্ছে।কিন্ত সে এতটুকুও নড়ছে না।মনভরে প্রকৃতির এই নিদারুণ খেলা দেখতে লাগলো।আর একটি হাত জানালার বাইরে মেলে ধরে অতীতের স্মৃতিগুলোকে তাড়া করতে লাগলো।

নীলিমা!!!নীলিমারা এই শহর ছেঁড়ে চলে গেছে প্রায় দেড় বছর।তবু আজও তার অশ্রুমাখা চেহারাটা ভেসে উঠে চোখের সামনে।কতই না অতৃপ্ত স্বপ্ন অংকুরেই ঝরে গেলো হঠাৎ আসা প্লাবনে।

তমালের স্বপ্নগুলো কেমন যেন ছন্নছাড়া।তার নির্ঘুম রাতের সঙ্গী অসীম রহস্যের রাতের আকাশ।কখনো মেঘলা আবার কখনো ভরা পূর্ণিমা।সব কিছুই যে তার খুব পরিচিত।আকাশের দিকে তাকিয়ে সে যেন কাকে খুঁজে বেড়ায়।

ঐ দিন শুক্রবার।পাশের ফ্ল্যাটের রফিক আঙ্কেল আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেন।রেখে যান ১৭ বছরের মেয়ে নীলিমা আর ৪ বছরের ছেলে শুভ কে।নিষ্পাপ দুইটি মুখ।

আঙ্কেল মারা গেছেন প্রায় দুই বছর।আজও তমাল ঐ দিনের কথা ভুলতে পারে না।মনে পড়লেই বুকের ভেতর কেমন যেন অজানা ব্যাথা শুরু হয়।ভয়াবহ ব্যাথা।এর কারনটা তমাল এখনও খুঁজে বের করতে পারে নি।

তমাল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।কান্নার শব্দ ভেসে আসছে ঘরের ভিতর থেকে।ঘরে অনেক লোকের সমাগম।ঢুকতেই আন্টিকে চোখে পড়লো।আন্টি আঙ্কেলের মৃত শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো আর্তনাদ করছে।কিছু আত্মীয় উনাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছে।কিন্ত কোন লাভ হচ্ছে না।হঠাৎ করে শুভকে চোখে পড়ল।বাবা মারা যাওয়ার ব্যাপারটা তার কাছে বোধগম্য নয়।তাই সে এত লোকের মাঝেও তার খেলনার গাড়ি নিয়ে খেলছে।শুভর দিকে তাকিয়ে আন্টি আরো শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো।কেমন যেন শোকের ছায়া চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

কি ব্যাপার নীলিমাকে দেখা যাচ্ছে না কেনো?আরে ঐতো মেধাবী ছাত্রী নীলিমা।অপরূপ সুন্দরী।কলেজের এর 1st গার্ল।কত গর্বই না বাবার তাকে নিয়ে।দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে এক কোণায়,চোখের অবিরাম অশ্রুধারা গাল বেয়ে পরছে।কিন্ত মুখে একটি শব্দও নেই।নীলিমা বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে।হয়তো বলছে "বাবা,আমার যে আর মাত্র ৬ দিন পর HSC এর রেজাল্ট দিবে,তুমি কি জানো না?জানলে কেন তোমার মেয়ের রেজাল্ট না দেখে চলে গেলে?"

হঠাৎ খুব শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো নীলিমা।বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে কাঁদতে লাগলো।চোখ বেয়ে অবিরাম বর্ষণ হচ্ছে।কি নিষ্পাপ একটি মেয়ে কাঁদছে।তমালের ইচ্ছা করছে নীলিমাকে জড়িরে ধরে ওর কান্না থামানো।কিন্তু কখনো কখনো সব ইচ্ছা পূরণ হয় না।নীলিমার অশ্রুশ্রান্ত চোখের দিকে তাকাতেই তমালের মনে কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভূত হলো।সেই ব্যাথাই আজ অনেক বড় আকার ধারন করেছে।

তমাল তার অন্য হাতটাও জানালার বাইরে মেলে ধরে বৃষ্টির আকাশ আর বৃষ্টির খেলা দেখতে লাগলো।হয়তো সে নীলিমার সাথে অজানা এক বাঁধনে বাঁধা পড়ে গেছে ।