মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১১

নীলপদ্ম...


শীলার কবরকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আনন্দ।অশ্রুসিক্ত নয়নে আকাশের দিকে তার একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার কাঁদতেশুরু করলো।মনে হলো তার সব অভিমানগুলো প্রকাশ করলো।


কি ব্যাপার!!!আনন্দের তো এইখানে থাকার কথা না।কবরও জিয়ারত করার কথা না।সে যে হিন্দু!!!লোকে তাকে এইখানে এই অবস্থায় দেখলে কি ভাববে!!এই দিকে তার কোন পরোয়া নেই।সে আপন মনে কেঁদে চলছে।তার কান্নার শব্দে হয়তো শীলাও কেঁপে কেঁপে উঠছে।আনন্দের খুব ইচ্ছা করছে কবর খুঁড়ে দেখার শীলাও কি তার কান্নার শব্দে কাঁদছে কিনা।সেটা যে জানা তার জন্য খুব বেশি জরুরী।শীলা বলেছিলো সে কাঁদলে নাকি শীলাও কাঁদে।আনন্দের কান্নার তীব্রতা আরো অনেক গুন বেড়ে গেল।


কলেজে প্রথম বর্ষে পরিচয় শীলার সাথে।খুবই ভদ্র আর সুশীল একটি মেয়ে।দেখতে শুনতেও বেশ ভাল।এক সাথে একই স্যারের কাছে পড়তো বলে অদের সম্পর্কটা অন্যদের চেয়ে বেশ ভালো ছিল।তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ত হতেও খুব বেশি সময় লাগলো না।


আনন্দ কেমন যেন পাগলাটে!!! সারাদিন শুধু উদ্ভট উদ্ভট কাণ্ড করে বেড়ায়।একবার স্যারের কাছে থেকে স্যারের হ্যান্ডনোট চুরি করায় কি বকুনিটাই না খেলো বেচারা আনন্দ!!!


আনন্দ সেই প্রথম থেকেয় শীলাকে পছন্দ করত।কিন্তু কখনো বালার সাহস হয় নি।সে জানে যে শীলা কখনোই তার এই ধরনের পাগলামি মেনে নেবে না।সে খুবই বাস্তববাদী একটি মেয়ে।তবে শীলার যে তার পাগলামি ভালো লাগত না,তা কিন্তু নয়।সে তার পাগলামিগুলোর প্রেমে পড়ে গেছে অনেক আগেই।আনন্দ একদিন তা বুঝতেও পারে---একদিন সে বাসায় মার সাথে কথা কাটাকাটি করে না খেয়ে কলেজে চলে আসে।এসে শীলাকে জিজ্ঞেস করে সে কোন খাবার এনেছে কিনা।শীলা ব্যাগ থেকে একটি অ্যাপেল বের করে আনন্দকে দেয়।আনন্দের চোখ দিয়ে তখন টপটপ করে পানি ঝরতে থাকে।শীলাও যেন কাঁদা শুরু করে দিলো আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,জানিস আনন্দ তোর মন খারাপ থাকলে যে আমার ভীষণ খারাপ লাগে।আর তুই কাঁদলে যে আমারও ভীষণ কান্না পায়।


এর প্রায় তিন বছর পর,শীলাকে অপারেশনের জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।কি যেন এক ক্যানসারে ধরেছে তাকে।দেশে চিকিৎসা নেই।আনন্দকে কাছে ডেকে শীলা বলল,আমাকে একটা কথা দিবি?-তুই খুব ভালো একটা ছেলে।ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলিস।আর আমারে ভুলে যাইস।কথাগুলো বলতে বলতে শীলার চোখ দিয়ে গড়গড় করে পানি পরতে লাগলো।তার কান্না দেখে আনন্দ আবার নতুন করে তারে প্রেমে পড়ে গেলো।অব্যক্ত কিছু কথা রেখে চলে যাচ্ছে শীলা।পেছন থেকে আনন্দ দৌড়ে শীলাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,কিরে আমারে ছেঁড়ে থাকতে পারবি?একটুও কি কষ্ট হবে না তোর?শীলা আনন্দকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিলো।আর অস্পষ্টভাবে কি যেন বলল।তবে আনন্দ যেন কেন মনে করল,শীলা অস্পষ্টভাবে তাকে বলছে,'আমি তোকে অনেক ভালবাসিরে।'


বিশ বছর পর এক ভরা পূর্ণিমা রাতে আনন্দ আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ দেখছে আর বিড়বিড় করে বলছে" শীলা আমি তোর কথা রাখতে পারলাম না।আমাকে ক্ষমা করে দিস।"