শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৩

কায়া


সারা দিনের উত্তপ্ত সূর্য পশ্চিম আকাশে অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকাদের ডাকাডাকি শুরু হয়ে গিয়েছে। বসন্তের দমকা হাওয়ায় গাছের পাতাগুলো নাড়াচাড়া দিয়ে উঠছে। চারদিকে আধো-আলো আধো-ছায়ার খেলায়, মফস্বলের আঁকাবাঁকা রাস্তাটি থমথমে হয়ে আছে। খুব শীঘ্রই ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আসবে চারপাশ, ঝিঁঝিঁ পোকাদের ডাকাডাকির শব্দ মাইল দুই-এক দূরে থেকেও শোনা যাবে। রাত কিছুটা গভীর হওয়ার সাথে সাথে চারদিক স্তব্ধ হয়ে আসে। তখন দূরে কিছু ছোট চায়ের দোকান ছাড়া আর কোথাও কোন হলদে আলো থাকে না। তবে রাস্তার পাশ ঘেঁষে থাকা জোনাকি পোকার আলোতে যে কেউ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারবে খুব সহজে। মাঝে মাঝে কিছু গাড়ি চলাচল করে, রাত বাড়ার সাথে সাথে গাড়ির আনাগোনাও কমে যেতে যেতে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। দূরে ছোট চায়ের দোকান গুলোর হলদে আলোও আস্তে আস্তে নিভতে শুরু করে। তখন রাস্তার পাশে মাঠ বরাবর তাকালে কোটি-কোটি জোনাকির দেখা মেলে, নিজেকে মনে হয়-ভুল রাস্তা ধরে জোনাকি রাজার দেশে ঢুকে পড়া, পথভোলা এক অপরাধী আগন্তুক।   

উতপ্ত দিন শেষে রাস্তার পাশে লাগানো গাছগুলোর পাতার ফাঁক দিয়ে হাজারো পাখির নীড়ে ফেরার এক অপূর্ব দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছে সুনীল। তার হাতে কালো পেট মোটা ব্যাগ। সুনীল খুব আগ্রহ নিয়ে তার চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছে। দমকা বাতাস এসে তার হাতের ব্যাগটাকে দোল খাওয়াচ্ছে। এদিকে লক্ষ্য না দিয়ে নিজের মত করে চারপাশ পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত সে। শৈশবে খুব ডানপিটে আর চঞ্চল থাকা সত্ত্বেও বড় হবার পর একদম গম্ভীর আর শান্ত হয়ে যায় সুনীল। কেন যেন ওর মনে হয়-সব ডানপিটে বাচ্চারাই বড় হয়ে গম্ভীর হয়ে যায়। এর পেছনে একটা যুক্তিও দাঁড় করিয়েছে সুনীল, সেটা হলো-শৈশবে এই ধরণের বাচ্চারা এত বেশি দুষ্টামি করে যে, জীবনের বাকি সময়টা ওই স্মৃতিগুলো মনে করেই অনায়াসে কাঁটিয়ে দিতে পারে। সুনীলের চারপাশ পর্যবেক্ষণ চলছেই। পর্যবেক্ষণের এক পর্যায়ে সে লক্ষ্য করলো, একটা কালো রঙের কুকুর বেশ অনেকক্ষণ যাবত ওর পেছন পেছন হাঁটছে। ও হাঁটলে কুকুর হাঁটে, ও থামলে কুকুরও থেমে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে কুকুরের দিকে তাকাতেই কুকুরটি এমন ভাবে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়, যাতে করে মনে হবে-কুকুরটি সুনীলকে দেখেই নি, পেছন পেছন হাঁটা তো অনেক দূরের কথা। কুকুরের মতলব ভাল ঠেকছে না সুনীলের কাছে, সে তার কালো পেট মোটা ব্যাগটাকে আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরলো।

এমনই এক বসন্তের দিনে প্রথম দেখা হয় সুবর্নার সাথে। সুনীলের বন্ধু জয় এর ক্লাসমেট ছিল সুবর্না, ওদের ভার্সিটির কোন এক অনুষ্ঠানে সুনীলকে সাথে করে নিয়ে যায় জয়, আর পরিচয় করিয়ে দেয় ওর সব বন্ধুদের সাথে। সবার মাঝে সুবর্নাও ছিল, নীল শাড়িতে উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙ। সুনীলের সাথে পরিচয়ের সময় ভদ্রতার খাতিরে একটু হেসেই সেখান থেকে বিদায় হয় সুবর্না। সকলের ভিড়ে সুবর্নাকে একটু আলাদাই লেগেছিল সুনীলের, কেমন যেন খুব চুপচাপ। চোখের মধ্যে সারাক্ষণ জল ছলছল করছিল, সুনীলের মনে হয়েছে অনেক কথা লুকোনো আছে এই জল ছলছল চোখের অন্তরালে।

কুকুরটা এখনো পেছন পেছন হাঁটছে, খুবই অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সুনীল। আরেকটু সামনে এগুলেই মোড় আর সেখানে দঁড়িয়ে আছে ছোট একটা চায়ের দোকান। ওটাকে লক্ষ্য করেই এগিয়ে যাচ্ছে সে। হঠাৎ সামনের আঁকাবাঁকা রাস্তায় নিজের ছায়া দেখে, সুনীলের বুঝতে অসুবিধে হয় না - পেছন থেকে গাড়ি আসছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে কোন কারন ছাড়াই গাড়িটি অনবরত হর্ন দিয়েই যাচ্ছে। ব্যাপারটা কি, তা জানার জন্য পেছন ফিরে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায় সে। গাড়ির একপাশের জানালা খুলে মাথা বের করে পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের এক মেয়ে। ছলছল চোখে সুনীলকে উদ্দেশ্য করে জিগ্যেস করে- এক্সকিউজ মি, বলতে পারবেন মেহেরপুরে যাওয়ার রাস্তা এটাই কিনা? সুনীল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে, মেয়েটি দেখতে ঠিক সুবর্নার মত।


জয়ের জন্মদিনে দ্বিতীয় বারের মত দেখা হয় সুবর্নার সাথে। পড়নে ছিল নীল রঙের জামা। সুবর্নার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় সুনীল, ওকে উদ্দেশ্য করে বলে-- আচ্ছা, আপনার প্রিয় রঙ কি নীল? - নাহ, কিন্তু কেন বলুন তো? - নাহ মানে, আজ নিয়ে আপনার সাথে দুইবার দেখা হলো। আর আশ্চর্যের ব্যাপার হল দু’বারই আপনার পড়নে নীল রঙের কাপড় দেখলাম তো, তাই আর কি। - ও আচ্ছা, আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, আমার প্রিয় রঙ কি তা আমার জানা নেই, বলতে পারেন কখনো জানার ইচ্ছেও হয় নি। আম্মুর প্রিয় রঙ নীল। তাই তিনি তার একমাত্র আদরের মেয়েটাকে নীল রঙে রাঙিয়ে রাখার চেষ্টা করেন সবসময়। - বাহ দারুন তো। একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন? - কি ব্যাপার? - আমার নামের শেষেও নীল রয়েছে। তারমানে আপনার আম্মু আমাকেও পছন্দ করবে। কথাগুলো বলেই খিলখিল করে হাসতে থাকে সুনীল। এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত, বুঝতে না পেরে চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকে সুবর্না। সুনীল আবার বলতে শুরু করে- এরচেয়েও মজার ব্যাপার আছে, সেটা কি জানেন? আমার আর আপনার দু’জনের নামের সাথেই সু শব্দটা রয়েছে। সু শব্দটির অর্থ কি আপনার জানা আছে? - সু শব্দের নির্দিষ্ট কোন অর্থ নেই। একেক সময় একেক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই যেমন, আমার নামে সু এর অর্থ হচ্ছে সুন্দর আর আপনার নামে সু এর অর্থ হচ্ছে পবিত্র।  

বলতে পারবেন মেহেরপুরে যাওয়ার রাস্তা এটাই কিনা? সুনীল ভাবনার রাজ্য থেকে আচমকা কানে আসা শব্দে ধপাস করে ভূমিতে আঁচড়ে পড়ে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়- জ্বি, একটু সামনে এগুলেই একটা মোড়, মোড় থেকে বায়ে সোজা এগিয়ে গেলেই মেহেরপুর। মেয়েটি ধন্যবাদ দিয়ে গাড়ির জানালাটি লাগিয়ে দিলো। গাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে, সুনীল হাতে পেট মোটা ব্যাগ নিয়ে অনড় দাঁড়িয়ে গাড়ির পেছনের লাল বাতিটির অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া দেখছে।


শীতকাল, জয়ের ভার্সিটিতে পিঠার উৎসব চলছে। অনিহা সত্ত্বেও জয়ের সাথে সেবারও সেখানে যেতে হয় সুনীলের। বিশাল পরিসরে উৎসব চলছে। গায়ের সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ছোট ছোট খোপের মত অনেক গুলো পিঠার স্টল। সুনীলের পিঠার প্রতি তেমন কোন আগ্রহ নেই বললেই চলে, তারপরও বন্ধুর আবদার রাখতেই এখানে আসা  অথবা সুবর্নাকে আরেকবার দেখতে আসা। স্টলগুলো ঘুরে দেখতে দেখতে হঠাৎ-ই দেখা মেলে সুবর্নার সাথে। একটি স্টলের এক কোণে চুপটি মেরে বসে আছে, পড়নে আবারো নীল রঙের শাড়ি। আজ সুবর্নার চোখ একটু বেশিই ছলছল করছে। জগতে এক প্রজাতির মানুষ আছে, যারা কখনো কাঁদতে জানে না। খুব কষ্টেও তারা হাসতে পারে। একমাত্র তাদের চোখ দেখেই বুঝা যায়, কতটা কষ্ট তারা চেপে রেখেছে নিজের মাঝে। কেন যেন সুবর্নাকে দেখে আজ খুব কষ্ট হচ্ছে সুনীলের।


কুকুরটি এখনো পেছন পেছন হাঁটছে। এত রাত হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কুকুরটি কেন পেছন পেছন হাঁটা ছাড়ছে না, এই নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই সুনীলের। প্রথমে যেভাবে ভয় পেয়েছিল, এখন আর ততটা ভয় লাগছে না তার। কেননা সুনীল বুঝতে পেরেছে কুকুরটি তাকে কামড়াতে আসবে না, যদি কুকুরটির ওই রকম কোন কুমতলব থাকতো, তাহলে এতক্ষণ ধরে পেছন পেছন না হেঁটে কিছু একটা কাণ্ড করে বসতো। এই ভেবেই দুশ্চিন্তার রেশ কেটে গেলো তার। হাঁটার গতি কিছুটা ধীর করে দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে মোড়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে সুনীল।


সুনীল-সুবর্নার ভালবাসার অধ্যায় ঠিক কবে শুরু হয়, তা সঠিক করে কারো জানা নেই। একদিন জয় সুনীলকে সরাসরি জিগ্যেস করেও সঠিক কোন দিন তারিখ বের করতে পারে নি ওর কাছ থেকে। আমরা ধারণা করে নেই, সেই পিঠার উৎসব থেকেই শুরু হয়ে যায় সুনীল-সুবর্না অধ্যায়। এরপর দিন কাটে, দিনে দিনে গড়ে তুলে মাস, আর মাসে মাসে মিলে বছর। সুনীল-সুবর্নার ভালবাসা দিনের পর দিন আরো মজবুত আর অটুট হয়েই চলেছে। কোন এক মেঘলা দিনের কথা, সুনীল সুবর্নার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে ভালবাসায় দীপ্ত দুটি প্রাণ। সুনীল সুবর্নার অনেকটা আছে চলে আসে, আরো কাছে, সুবর্নার নিঃশ্বাস সুনীলের নিঃশ্বাসের সাথে মিশে যায়। দূর-দূরান্তে পাখীদের কিচিরমিচির। সুনীল সুবর্নার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে- “ভালবাসি।”

সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে চায়ে চুমুক দেয় সুনীল। কিন্তু চায়ের স্বাদটা ভাল লাগছে না তার কাছে, কেমন যেন ঠাণ্ডা হয়ে আছে চা টা, চিনির পরিমাণটাও খানিকটা কম। মুখটাকে এক নিমিষেই তেঁতো করে ফেলেছে, ইচ্ছে করছে চায়ের কাঁপটা ছুড়ে ফেলে দিতে। কিন্তু কিছু করার নেই, সারা দিন শেষে মাথাটা কিছুটা ধরেছে ওর, তাছাড়া আশেপাশে আর কোন দোকানও খোলা নেই। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঠাণ্ডা চায়েই চুমুক দেয় সুনীল।


এক শীতের রাতে চায়ের কাঁপে চা ঢালতে গিয়ে হাত থেকে পরে যায় চায়ের পাতিল। গরম চা এসে পায়ে পড়তেই ঝলসে যায় পায়ের চামড়া। খেয়াল নেই সেদিকে সুনীলের, চোখ নিবদ্ধ হয়ে আছে সদ্য হাতে আসা সাদা পৃষ্ঠার উপর গুঁটি গুঁটি হরফে লিখা একটা চিরকুটের দিকে। হ্যাঁ সুবর্নার লেখা চিরকুট।

“প্রিয় সুনীল, তোমার সাথে জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে যখন আমি সুখের সর্বচ্চো শিখরে আরোহণ করছি, ঠিক সেই মুহূর্তে তোমাকে লেখা আমার প্রথম ও শেষ চিঠি। তোমার সাথে এতদিন থেকে আমি আমার অস্তিত্বকে খুঁজে পেয়েছি, খুঁজে পেয়েছি শহরের ইট বালুতে চাপা পড়ে যাওয়া সদা হাস্যজ্বল সেই মেয়েটিকে। তোমার কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে কাউকে নির্লিপ্তভাবে ভালবাসা যায়, কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে। তোমার কাছ থেকে জানতে পেরেছি জীবনে বেঁচে থাকার রহস্য, জীবনটাকে ভালবাসতে শিখেছি তোমার কাছ থেকে। নীল রঙা আকশের নীল রঙ ছুঁতে শিখেছি তোমার হাত ধরে, মেঘ টেনে মাটিতে নামিয়ে আনতে শিখেছি তোমার কাছ থেকেই। তোমার সাথে থেকেই খুঁজে পেয়েছি আমার প্রিয় রঙ কে, ঘুটঘুটে কালো রাতে চাঁদ উঠলে, তোমার সমগ্র শরীর জুড়ে যে রঙ খেলা করে, সেই রঙটা। অনেক অনেক কিছু পেয়েছি তোমার কাছ থেকে, কিন্তু দেওয়ার মতো কিছুই দিতে পারি নি। আজ একটা জিনিস দিবো তোমাকে, আর তা হলো ‘মুক্তি’। হ্যাঁ তোমাকে মুক্তি দিয়ে যাচ্ছি আমার অযাচিত এই জীবন থেকে। তোমার ভালবাসার মূল্য দিতে পারি নি কখনো, তাই আমাকে মাফ করে দিয়ো। ভালবাসার অপর নাম কি শুধু কাছে পাওয়া? হয়তো না পাওয়ার মাঝেই আমার ভালবাসা। কখনো জানতে চেয়ো না কেন এতো কিছু পাবার পরও তোমাকে মুক্তি দিয়ে যাচ্ছি, শুধু যাবার বেলায় একটা কথাই বলে যাই, অনেক ভাল থেকো সুনীল, অনেক ভাল কাউকে খুঁজে নিয়ো নিজের জন্য, আর কখনো এই পাপীটার খোঁজ করো না। ইতি, তোমার পাপী সুবর্না।”


চা শেষ করে মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে সুনীল। হাতে তার পেট মোটা কাল ব্যাগ। কুকুরটি এখনো পেছন পেছন হাঁটছে, বিষণ্ণ মনে রাতের কালো আকাশ দেখছে সুনীল, কেন যেন মনে হচ্ছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এসে তার দু’গালের উপর পড়ছে, আকাশের দিকে গাড় দৃষ্টি দেয় সে, সেখানে কোন মেঘ নেই।


পুড়ে যাওয়া পা নিয়েই সে রাতেই জয়কে সাথে করে সুবার্নার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয় সুনীল। সুবর্নার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে সুনীল। জয় সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেছে সুবর্নার সাথে কথা বলতে। সুনীলের শরীর শীতে কাঁপছে, আজ এরচেয়েও বেশি কাঁপুনিতে কাঁপছে তার সমগ্র স্বত্তা। জয় নিচে নেমে আসে, ওর চেহারা মলিন। সুবর্না সম্পর্কে জানতে চাইলে ও কিছু না বলে শুধু বলেছে “চল সুনীল, বাড়ি চল।”


দরজা ঠেলে ঘরের ভেতর ঢুকে সুনীল। আলো বাতাস না এসে এসে ঘরের দেয়াল, মেঝে সব স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে।  ঘরের কোণে একটা সোডিয়াম বাতি জ্বলছে। বাতিটির আলোতে ঘরের ভেতোরটা কিঞ্চিৎ আলোকিত হলেও সিংহভাগই অন্ধকারে আচ্ছন্ন। দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা সুবর্নার দেওয়া নীল রঙের সেই গিটার, যেটা দিয়ে সুনীল হাজারো গান শুনিয়েছে সুবর্নাকে। গিটারটির ঠিক উপরেই  পুরোটা দেয়াল আবৃত করে রাখা সুবর্নার নীল রঙের শাড়ি পরিহিত ছবি দিয়ে। ছবিটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সুনীল। কালো পেট মোটা ব্যাগ থেকে জন্মদিনের একটি কেক বের করে ছবিটির সামনে রেখে বলে-

“সুবর্না, শুভ জন্মদিন। ২৬তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিয়ো, জানি ভাল আছো তুমি চার দেয়ালের ছোট্ট সেই ঘরে। আমাকে কেন বললে না যাওয়ার বেলায়? আমিও না হয় যেতাম তোমার সাথে। তোমার জল ছলছল চোখের অন্তরালে কি লুকিয়েছিলো, তা জানতে আমার বেশি সময় লাগে নি। তুমি কি ভেবেছো তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি তোমাকে ভুল বুঝবো? আরে বোকা মেয়ে, সবই আমার জানা ছিলো। তাইতো এতো রাতেও তোমার বাসায় ছুটে গিয়েছিলাম। একটাই আফসোস থেকে গেলো, শেষ বেলায় তোমার হাতটি ধরতে পাড়ি নি। আমাকে নিয়ে ভেবো না সুবর্না, আমি বেশ ভাল আছি, তোমার শেষ কথামতো অনেক ভাল একজনকে খুঁজে নিয়েছি, যার সাথে কাটিয়েছি জীবনের সব চেয়ে কষ্টের সময়গুলো, সে হলো তোমার কায়া। জীবনের ২৬তম জন্মদিনে তোমার কাছে একটাই আবদার, বাকী সবকটা জন্মদিনও আমার সাথে কাঁটাতে হবে, কি পারবে তো? আমি ঠিক এইভাবে প্রতিটা জন্মদিনে তোমার জন্য কেক নিয়ে আসবো, তোমাকে খাইয়ে দিবো নিজ হাতে।”

বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। কুকুরটি এখনো বাসার সামনে ঠাই দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন