শনিবার, ২৫ জুন, ২০১১

একটি ইলিশ মাছ

বাজারে ইলিশের যে দাম তাতে করে মধ্যবিত্তদেরই কিনতে হিমসিম খেতে হয়,আর গরিব হলেতো কথায় নাই। কিন্ত এই কথা পরিবানুকে কে বোঝাবে? সে তো নাছোড়বান্দা। তাকে যে ইলিশ খেতেই হবে।একদিন কোন এক পাড়ার মেয়ের কাছে শুনেছে যে ইলিশ খেতে নাকি দারুন মজা।তাই সে ওই দিন থেকেই আবদার করে বসে আছে যে তাকে ইলিশ মাছ খাওাতেই হবে।তার কাছে তো আর এইটা বোধগম্য না যে তার বাবা একজন রিকশাচালক।সারা দিন রিকশা চালিয়ে তিন ছেলে,এক মেয়ে আর নিজের আর বউ এর দুবেলার দুমুঠো খাবার যোগার করতেই তার জন্য সমস্যা হয়ে যায়।তারপরও সে একমাত্র মেয়ের আবদারের কথা মাথায় রেখে একদিন বাজারে যায়, কিন্ত ইলিশের দাম শুনে তার আর মাছটা ধরে দেখারও সাহস হয় না।সে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতেছে।সে জানে আজও প্রতিদিনের মতো তার ৮ বছরের মেয়ে তার আশায় বসে আছে এই ভেবে হয়তো আজ বাবা সত্যি ইলিশ মাছ নিয়ে আসবে আর সে খুব খুশি মনে তা নিয়ে মাকে দিয়ে বলবে মা ইলিশ মাছ ভাজ তো।গরম গরম ভাতের সাথে খাবো।তার মেয়ের এই রকম ছেলেমানুষির কথা ভাবতে ভাবতে তার চোখে জল চলে আসে,হয়ত কোনোদিনও সে তার পরম আদরের মেয়ের ওই হাসিমাখা চেহারায় খেতে দেখবে না,সবই যে তার ব্যর্থতা।সে কি করে তার অবোঝ মেয়েটাকে বোঝাবে যে তার বাবা,তার মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম নয়।সে বাসায় ফিরতেই পরিবানু প্রতিদিনের মতো ছুটে এসে বাবাকে জরিয়ে ধরে বলে বাবা ইলিশ আনছো? স্বামীর কষ্টটা বোঝতে পেরে  পরিবানুর মা  পরিবানুকে কাছে ডেকে নিয়ে বলতেছে,চুপ কর,দেখশ না,সারা দিন কাম কইরা তর বাবা এহন মাত্র বাসায় ফিরল,কেন জ্বালাতন করতেছিস? মার কাছে বকা খেয়ে চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে ঘরে ধুকে গেলো। বাবা মা দুজনেই বোঝতে পারল যে,তাদের মেয়ে আজ কাঁদতে শিখেছে।তারাও কেদে ফেললো।একটু পর ঘরের ভিতর থেকে আওয়াজ আসতে লাগলো যে,আমি আজ খাবো না।যাও তো এখান থেকে।ঘরের পীড়ায় বসে কথাগুলো শুনতে শুনতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগলো পরিবানুর বাপ.........
আজ প্রায় ছয় মাস হতে চলছে।পরিবানু ঠিক বোঝতে পেরেছে যে তার বাবা তাকে কোনদিনও ইলিশ মাছ খাওয়াতে পারবে না।তাই এখন আর মিছে আবদার করে না পরিবানু। আজ অনেক রাত হয়ে এলো,বাবা এখনো বাসায় ফিরছে না।মা মিছে মিছে চুলায় হাড়ি বসিয়ে রেখেছে।ছোট ভাইটা বারবার খাবারের জন্য তাগাদা দিতেছে,মা বলতেছে এইতো ভাত রান্না হয়ে আসতেছে।একটু পর আলু ভর্তা করেয় খেতে দিবো।কিন্ত হাড়ি তে যে কিছই নেয়।কোত্থেকে চাল আর আলু আসবে?বাবা যে এখনো বাড়ি ফিরে নাই।ছোট ভাইটা খাওয়ার আশায় আশায় না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে।মা হয়তো ভুলে গেছে যে তার আদরের পরিবানু বোঝতে শিখেছে...........এই যে বাবার পায়ের আওয়াজ আসতেছে।বাবা হয়তো এসে পড়েছে। ছোট ভাইটাকে যে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাওয়াতে হবে।তাই পরিবানু ছুটে গিয়ে বাবার কাছ থেকে বাজারের ব্যাগ আনতে গেল।কি ব্যাপার?ব্যাগটা এতো ভারি লাগতেছে কেন? মাছের গন্ধ ও আসতেছে।সে বাবাকে বললো বাবা কি মাছ এইটা? বাবা কোন উত্তর না দেয়ায়,ছুটে মাকে গিয়ে বললো দেখো মা,বাবা যেন কি মাছ নিয়া আইসে,অনেক সুন্দর গেরান।মা বললো আরে বোকা মেয়ে এইটাই যে ইলিশ মাছ,এই কথা শুনার পর পরিবানুর চোখে পানি চলে আসল,সে খুব ভাল করে মাছটাকে ধরে দেখল।মাছ কাটা থেকে শুরু করে মাছ ভাঁজা পর্যন্ত খুব আগ্রহ নিয়ে মার সাথে আঠার মতো লেগে ছিল।তা দেখে পরিবানুর বাবার চোখে সুখের জল এসে পরল। পরিবানু ছোট ভাইটাকে ডেকে আনতে গেল,বললো দেখ বাবায় ইলিশ আনছে।খাইতে আস।সবাই এক সাথে খেতে বসলো।মা গরম ভাত রানছে ,ভাত থেতে গরম গরম ভাব উঠতেছে।ইলিশ মাছ আর শুকনা মরিচ ভাজা দিয়ে পরিবানু খুব মজা করে খাইতেছে আর বলতেছে মা অনেক ভাল হইছে।আর পরিবানুর বাবা বলতে লাগলো বউ তুমিতো অনেক ভাল রাঁধো।স্বামীর মুখে এই প্রথম তার রান্নার প্রশংসা শুনে কেঁদে ফেললো পরিবানুর মা,এটা যে খুশির কান্না.............................................

৫টি মন্তব্য:

  1. Tadar taka nai thik e bt mone shukh ache..gr8..imran agia jao..

    উত্তরমুছুন
  2. Corom..tadar taka nai kintu mone shukh ache..go ahead imran vai

    উত্তরমুছুন
  3. সাধারন কিছু মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া একটি অসাধারন গল্প........
    সুন্দর concept......:)

    উত্তরমুছুন
  4. এ যেন শুধু পরিবানুদের গল্প নয় যেন সমগ্র নিম্নবিত্তদের জিবনী ফুটে উথেছে।সুন্দর......।।

    উত্তরমুছুন